রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোবিন্দগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বেড়েই চলছে। চলতি ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে বিভিন্ন শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তিতে গোপন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক অপকর্মে জড়িত একটি সক্রিয় চক্র তাদের কর্মকা- অব্যাহত রাখায় সচেতনমহলের প্রশ্নের মুখে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অর্জিত গৌরব নষ্টের পথে।
প্রকাশ, গোবিন্দগঞ্জের সুনামখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্প্রতি সরকারিকরণে তালিকায় আসে এবং সরকারিকরণের কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে। অত্র উপজেলায় একমাত্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ায় উপজেলার পাশাপাশি পাশ^বর্তী উপজেলার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২ হাজারের উপরে। সরকারি হওয়ায় প্রতি বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১৮০টি আসনের বিপরীতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অনলাইনে তাদের মেধা ও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। যেখানে ভর্তি বাণিজ্য অসম্ভব। কিন্তু থেমে নেই প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় অসাধু শিক্ষক চক্রটি। তারা অভিনব কৌশলে গোপন বাণিজ্যের মাধ্যমে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছেন। একটি সূত্রের দাবি এই তিনটি শ্রেণিতে প্রায় ১৭ জন শিক্ষার্থীকে গোপন বাণিজ্যের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, এবিএম ইমরোজ জামান, পিতা- মোঃ শাহিনুর জামান, মাতা. জীবন নাহার, বুজরুক বোয়ালিয়া, গোবিন্দগঞ্জ, ৭ম শ্রেণিতে ‘গ’ শাখায় রোল ৯০, ভর্তির তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৯ এর বিপরীতে ১১৩০টাকা জমা দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এই ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা ও অপেক্ষমান কোন তালিকায় ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে সে গোবিন্দগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রও ছিল না। তাহলে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে সে কীভাবে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৮ম (গ) পদ্ম শাখায় সাফিন খন্দকার, পিতা- মাহবুব আকন্দ, মাতা-নূরে জান্নাতি, গ্রাম-পগইল, ডাকঘর- নাকাইহাটকে গোবিন্দগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণি রোল দেয়া হয়েছে ৮৫। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে ২০১৭ সালে পি.এস.সি পরীক্ষায় পাশ করে ২০১৮ সালে ষষ্ঠ, ২০১৯ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার কথা; কিন্তু কীভাবে এই ছাত্র গোবিন্দগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রকৃত পক্ষে এই শিক্ষার্থী পৌরসভাস্থ পান্থাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের সপ্তম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্র। সেখানে তার শাখা-ক, রোল-৪২।
উল্লেখিত দু’জন শিক্ষার্থীই বিগত বছরে গোবিন্দগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল না। তাদের অত্র প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা, বেতন আদায় বহি ও পরীক্ষার ফলাফল বহিতে কোন নাম নেই বলেও গোপন সূত্রে জানা যায়। যা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধিকে গোবিন্দগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মোর্কারম হোসেন রানার সঙ্গে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আলাপ কালে জানান, ৬ষ্ঠ, ৭প্তম ও ৮ম শ্রেণির হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন সাংবাদিকদের দেখানো যাবেনা। এমনকি উক্ত ছাত্রদ্বয় যে রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে তার একটি (কক্ষ নং-১২৭)-এ যেতে চাইলেও যেতে দেননি।
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থীর ভর্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ‘ভর্তির অনুমতি পত্র’ প্রয়োজন। উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কি এই পত্রটি জাল জালিয়াতি করে দেখানো হয়েছে? শিক্ষার্থী ভর্তির ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃঞ্চ বর্মন কিছু জানেননা বলে জানান, তবে সরকারি চাকুরিজীবীর বদলিজনিত কারণ ছাড়া কাউকেই তিনি ভর্তির অনুমতি দেননি। তাহলে উল্লেখিত শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান না হয়েও কীভাবে ভর্তি হলেন?
এদিকে একটি সূত্র আমাদের জানান, প্রধান শিক্ষক উক্ত ১২৭ নম্বর কক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে অভিযুক্ত ছাত্রকে ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে সে পরীক্ষার খাতা নষ্ট করে পালিয়ে যায়। কারা এই সক্রিয় চক্রের সঙ্গে জড়িত সচেতন মহল তা যেমন জানতে চায় তেমনি তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
উল্লেখ্য চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নোট-গাইড সিলেবাসভুক্ত করতে ‘পাঞ্জেরি’ প্রকাশনীর সঙ্গে লক্ষাধিক টাকার গোপন বাণিজ্যের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই চক্রটিই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বেড়েই চলছে।